ফিলিস্তিন

 পৃথিবীর একমাত্র আংশিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্র বা জাতিসংঘ স্বীকৃত রাষ্ট্র ফিলিস্তিন। প্রথম মহাযুদ্ধে কৃত্রিম ফসফরাস তৈরির প্রতিদান স্বরুপ ৯১১৭ সালের বেলফোর চুক্তির মাধ্যমে ১৯১৮ সাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ফিলিস্তিন অঞ্চল খালি করে ইহুদিদের জন্য বসতি স্থাপন করা হয়। তখন আরবদের প্রতিবাদের মুখে বিষয়টি জাতিসংঘের দায়িত্বে দেওয়া হয়। জাতিসংঘ দুই রাষ্ট্রের প্রস্তাব দেয়। ইহুদীরা ৩২% হয়েও তারা পাবে ফিলিস্তিনের ৫৬.৫% পার্সেন্ট, ফিলিস্তিনিরা পাবে ৪৩%। বাকি ০.৫% আলকুদস ভূখণ্ড। যা আন্তর্জাতিক অঞ্চল। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির এ প্রস্তাব কার্যকর হয়। আরব লীগ দ্রুত বৈঠকে বসে। কয়েকটি আরব দেশ মিলে স্যালভেশন আর্মি গঠন করে। নেতৃত্ব দেওয়া হয় সন্দেহজনক এক ব্যক্তি ফাওজী কাউকজীকে। এক মিলিয়ন পাউন্ড বাজেট করা হয়। দামেশকের কাতনায় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়।

এ সংবাদ শুনে ব্রিটেন আরবলীগের কাছে এ মর্মে বার্তা পাঠায়, ‘ফিলিস্তিনীদের প্রশিক্ষণ, সশস্ত্রীকরণ ব্রিটেন বন্ধুত্ব পরিপন্থি মনে করে।’ এতেই আরবলীগ ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়। স্বেচ্ছাসেবকদের বের করে দেয়। স্যালভেশন আর্মির সংখ্যা ৭৭০০ তে নামিয়ে আনে। অথচ ইহুদী সশস্ত্র সংগঠন এক হাগানারই সদস্য সংখ্যা ছিল তখন ৬২ হাজার! আরবলীগের এমন সিদ্ধান্তে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ১৯৪৫ সালে আরবলীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল ব্রিটেনের ইন্ধনে।


তখন আব্দুল কাদের হুসাইনীর নেতৃত্বে ফিলিস্তিনের গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয়। আন্দোলন মুসলিম বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিম দেশগুলো ব্রিটিশ আগ্রাসনের মুখে থাকার দরুন আন্দোলন তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। কেবলমাত্র ইখওয়ানুল মুসলিমীন সক্রিয়ভাবে ফিলিস্তিন জিহাদে অংশগ্রহণ করে। ১৯৪৮ সালের ৩ এপ্রিল আলকাস্তাল শহর অবরোধের সময় আরবলীগের কাছে অস্ত্র চাওয়া হলে কোনো সাড়া মেলেনি। ব্রিটিশ-বাহিনী ফিলিস্তিন ছাড়ার আগ পর্যন্ত আরব-বাহিনী ফিলিস্তিনে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর একের পর এক শহর ইহুদীদের হাতে পতন হতে থাকে। ১৫ জুলাই ১৯৪৮ সালে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ৬ দিনের মাথায় জাতিসংঘ শান্তির আহ্বান জানায়। আরব দেশগুলো প্রতারণাপূর্ণ শান্তি প্রস্তাবের ফাঁদে পা দেয়। ফলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ইহুদীদের অনুকূলে চলে যায়।


ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসেন জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব ফোক বার্নাডট। তিনি ১৯৪৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরলে ১৭ সেপ্টেম্বর ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করে। আরব-বাহিনী মুজাহিদদেরকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে পৌঁছতেই নিরাপত্তাবাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করে। আরব-বাহিনী সেসব এলাকাতেই অভিযান চালায়, যেগুলো জাতিসংঘ ইসরাইলের ভাগে দিয়েছিল। আরব-বাহিনী সেসব এলাকা থেকে মুজাহিদদের হটিয়ে ইহুদীদের জন্য দখল করার পথ সুগম করে দিত। ৭ লক্ষ ৭০ হাজার ফিলিস্তিনীকে বিভিন্ন আরব দেশে বিতাড়িত করা হয়। ইখওয়ানের প্রধান হাসানুল বান্নাকে গুপ্তঘাতকের মাধ্যমে শহীদ করা হয়। এভাবেই আরব-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির আয়োজন করা হয়। ১৯৪৯ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইহুদীরা মিশরের সাথে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করে। ২৩ মার্চ লেবাননের সাথে চুক্তি হয়। ৪ এপ্রিল হয় জর্ডানের সাথে। সিরিয়ার সাথে চুক্তি হয় একই বছরের ১ এপ্রিলের পরে। ফিলিস্তিনের অবশিষ্ট ২২% ভূখণ্ড মিশর ও জর্ডানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। জর্ডানের ভাগে যায় পশ্চিম তীর। গাজায় আধিপত্য বিস্তার করে মিশর। আরব-ইসারাইলের এ সন্ধির পর জাতিসংঘ ইসরাইলকে সদস্যপদ দেয়। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ একের পর এক জায়নবাদী এ রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দিতে থাকে। অত্যন্ত দু:খের সাথে লক্ষ্য করা গেল যে, এবারও আরব লীগ একসাথে বৈঠক করলেও ইসরায়েলর বিরুদ্ধে কোন কঠিন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি তিনটি আরব দেশের অনাগ্রহের কারণে৷ তারা কোন কারনেই কোনভাবে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চায়না৷ 


 এতকিছুর পরও ফিলিস্তিন শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বাসঘাতকতার এমন পটভূমিতেই শুরু হয় মুনাফিক পরিবেষ্টিত ফিলিস্তিনীদের নিঃসঙ্গ মুক্তি-সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফাতাহ আন্দোলন শুরু হয়। গঠিত হয় পিএলও। ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে ইয়াসির আরাফাত ছিটকে যান জিহাদ ও সংগ্রামের ধারা থেকে। শেখ আহমাদ ইয়াসীনের নেতৃত্বে গঠিত হয় হামাস। হামাসের নেতৃত্বে ইনতিফাদা ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনবাসী দিয়ে যাচ্ছে জিহাদ ও শাহাদাতের অন্তহীন নাজরানা। যা আজ বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখছে।

Comments

Popular posts from this blog

Who is Muhammad (sm)

Japan and atomic bomb.